29 Apr

বাংলা ব্যাকারণের এই নিয়ম জানলে বিসিএস সহ সকল পরীক্ষায় বাংলা বানান আর ভুল হবে না।


তৎসম শব্দের বানানের নিয়ম

** নিম্নেে প্রদত্ত ব্যতিক্রম ব্যতিত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানান অপরিবর্তিত ।

** তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ উভয় শুদ্ধ, শুধু সেসকল শব্দে কেবল ই বা উ কার-চিহ্ন ি, ু, ব্যবহার করতে হবে । যেমন: চিৎকার, চুল্লি, তরণি, ধমনি, ধরণি, পঞ্জি, পল্লি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, যুবতি, সূচিপত্র, উর্ণা, উষা

** ই, ঈ, উ, ঊ → অ-তৎসম শব্দ → তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে ই এবং উ এর পরিবর্তে তাদের চিহ্ন ি, ু, ব্যবহার করতে হবে ৷ যেমন: ইরানি, উনিশ, ওকালতি, কাহিনি, কুমির, খুশি

** পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহারে ই-কার হবে৷ যেমন: মেয়েটি, বইটি৷

** সর্বনাম, বিশেষণ, ও যোজক পদরূপে কী শব্দটির ঈ-কার লেখা শুদ্ধ । যেমন: এটা কী বই? কী আনন্দ! কী আর বলব? কী করে যাব? কী খেলে? জেনে রাখুন → কীভাবে, কীরকম, কীরূপে প্রভৃতি শব্দেও ঈ-কার হবে।

** প্রশ্নবাচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না হলে, সেই বাক্যে ব্যবহৃত ‘কি’ হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লিখতে হবে। যেমন: তুমি কি যাবে?

** এ, অ্যা → বাংলায় এ বর্ণ বা ে-কার দিয়ে এ এবং অ্যা বোঝায় । যেমন: কেন, কেনো; গেল, গেলে, গেছে; জেনো, যেন।

** কিছু তদ্ভব এবং বিশেষ দেশী শব্দে অ্যা এর ব্যবহার দেখা যায় → ‍্যা-কার (য-ফলা + আ-কার) যেমন: ব্যাঙ, ল্যাঠা

** বিদেশি শব্দে ক্ষেত্র-অনুযায়ী অ্যা বা ‍্যা-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন: অ্যাকাউন্ট, অ্যান্ড, অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাংক, ভ্যাট,

** ও→ বাংলা অ-ধ্বনির উচ্চারণ অনেক ক্ষেত্রে ও-র মতো হয়। এসব অ-ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা বৈধ । যেমন: এগারো,করানো, খাওয়ানো, দেখানো, নামানো, পাঠানো, বসানো, ** শেখানো, শোনানো,বাঁকানো, বাঁধানো, ঘোরালো, জোরালো, ধারালো,পড়ো, বলো, বসো, শেখো, করাতো, কেনো, দেবো, হতো, হবো, হলো; কোনো, মতো।

** ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় শব্দের শুরুতে ও-কার লেখা যাবে । যেমন: কোরো, বোলো

তবে অনুস্বারের সঙ্গে স্বর যুক্ত হলে ঙ হবে। যেমন: বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের

** বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দে অনুস্বার থাকবে।

** তৎসম শব্দের ট ঠ বর্ণের পূর্বে ষ হবে। যেমনঃ দুষ্ট


রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব

** রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না ৷ যেমন: অর্জ্জন, ঊর্দ্ধ্ব, কর্ম্ম, কার্ত্তিক, কার্য্য, বার্দ্ধক্য, মূর্চ্ছা, সূর্য্য ইত্যাদির পরিবর্তে যথাক্রমে অর্জন, ঊর্ধ্ব, কর্ম, কার্তিক, কার্য, বার্ধক্য, মূর্ছা, সূর্য ইত্যাদি হবে।


সন্ধির ক্ষেত্রে

** যদি পদের শেষে অন্তস্থিত-ম হয় এবং পরে ক খ গ ঘ থাকে তাহলে অন্তস্থিত-ম এর স্থলে অনুস্বার (ং) লেখা যাবে । যেমন: অহম্‌ + কার = অহংকার

** সন্ধি না হলে ঙ এর স্থলে ং হবে না ৷ যেমন: অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, আতঙ্ক, কঙ্কাল, গঙ্গা, বঙ্কিম, বঙ্গ, লঙ্ঘন


ইন্‌-প্রত্যয়ান্ত শব্দ

** সংস্কৃত ইন্‌-প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্তরূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম-অনুযায়ী সেগুলিতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন: গুণী → গুণিজন, প্রাণী → প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী → মন্ত্রিপরিষদ

** তবে এগুলোর সমাসবদ্ধ রূপে ঈ-কারের ব্যবহারও চলতে পারে। যেমন: গুণী → গুণীজন, প্রাণী → প্রাণীবিদ্যা, মন্ত্রী → মন্ত্রীপরিষদ

** ইন্‌-প্রত্যয়ান্ত শব্দের সঙ্গে -ত্ব ও -তা প্রত্যয় যুক্ত হলে ই-কার হবে। যেমন: কৃতি → কৃতিত্ব, দায়ী → দায়িত্ব, প্রতিযোগী → প্রতিযোগিতা, মন্ত্রী → মন্ত্রিত্ব, সহযোগী → সহযোগিতা


বিসর্গ (ঃ)

** কোনো শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) রাখা যাবে না । যেমন: ইতস্তত, কার্যত, ক্রমশ, পুনঃপুন, প্রথমত, প্রধানত, প্রয়াত, প্রায়শ

** উল্লেখিত ক্ষেত্রে শব্দমধ্যস্থ বিসর্গ-বর্জিত রূপ ব্যবহার হবে । যেমন: দুস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পৃহ, নিশ্বাস।


মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন

** তৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য ণ হবে । যেমন: প্রচণ্ড, লুণ্ঠন ।

** অতৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য ণ হবে না । যেমন: অঘ্রান, গুনতি, গোনা, ঝরনা, ধরন, পরান, সোনা, হর্ন।

** ট ঠ ড ঢ-য়ের পূর্বে তৎসম শব্দে যুক্ত নাসিক্যবর্ণ ণ হয়। যেমন: কণ্টক, প্রচণ্ড, লুণ্ঠন।

** অ-তৎসম শব্দে ট ঠ ড ঢ-য়ের পূর্বে কেবল দন্ত্য-ন হবে। যেমন: গুন্ডা, ঝান্ডা, ঠান্ডা, ডান্ডা


শ, ষ, স

** বিদেশি শব্দে ‘ষ’ ব্যবহার হয় না । যেমন: কিশমিশ, নাশতা, পোশাক, বেহেশ্‌ত, শখ, শয়তান,

** বিদেশি শব্দের বানান পরিবর্তন হয়ে বাংলা ভাষায় এসে স ছ হলে, সেক্ষেত্রে সবসময় ছ-এর ব্যবহার করতে হবে ।


হস-চিহ্ন

** হস-চিহ্ন বর্জন করতে হবে। যেমন: কলকল, চট, ঝরঝর, টক, টন, টাক, ডিশ, তছনছ । কিন্তু অর্থবিভ্রান্তি বা ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকে তবে হস-চিহ্ন ব্যবহার করা যাবে তবে না ব্যবহার করাই উচিৎ। যেমন: উহ্‌, বাহ্‌, যাহ্‌।


ঊর্ধ্ব-কমা

** ঊর্ধ্ব-কমা ব্যবহার করা যাবে না । যেমন: বলে (বলিয়া), হয়ে (হইয়া), আল (আইল)।


সমাসবদ্ধ পদ

** সমাসবদ্ধ পদগুলি একসাথে লিখতে হবে । যেমন: অদৃষ্টপূর্ব, নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র, পূর্বপরিচিত, বিষাদমণ্ডিত, লক্ষ্যভ্রষ্ট, সংবাদপত্র, সংযতবাক, সমস্যাপূর্ণ

** বিশেষ কারণে সমাসবদ্ধ শব্দটিকে এক বা একাধিক হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করা যাবে । যেমন: কিছু-না-কিছু, জল-স্থল-আকাশ, বাপ-বেটা, বেটা-বেটি


বিশেষণ পদ

** বিশেষণ পদ পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে না । যেমন: ভালো দিন, লাল গোলাপ, সুগন্ধ ফুল, সুনীল আকাশ, সুন্দরী মেয়ে, স্তব্ধ মধ্যাহ্ন।


না-বাচক শব্দ

** না-বাচক না এবং নি-এর প্রথমটি স্বতন্ত্র পদ হিসেবে এবং দ্বিতীয়টি সমাসবদ্ধ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। যেমন: করি না, কিন্তু করিনি।

** শব্দের পূর্বে না-বাচক উপসর্গ ‘না’ উত্তরপদের সঙ্গে যুক্ত ধাকবে। যেমন: নাবালাক, নারাজ, নাহক।

** অর্থ বোঝার জন্য কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে না-এর পর হাইফেন ব্যবহার করা যায়। যেমন: না-গোনা পাখি, না-বলা বাণী, না-শোনা কথা।


অধিকন্তু অর্থে ‘ও’

** অধিকন্তু অর্থে ব্যবহৃত ‘ও’ প্রত্যয় শব্দের সঙ্গে কার-চিহ্ন রূপে যুক্ত না হয়ে পূর্ণ রূপে শব্দের পরে যুক্ত হবে। যেমন: আজও, আমারও, কালও, তোমারও।


নিশ্চয়ার্থক ‘ই’

** নিশ্চয়ার্থক ‘ই’ শব্দের সঙ্গে কার-চিহ্ন রূপে যুক্ত না হয়ে পূর্ণ রূপে শব্দের পরে যুক্ত হবে। যেমন: আজই, এখনই।


উদ্ধৃতি

** উদ্ধৃতি মূলে যেমন আছে ঠিক তেমনি লিখতে হবে। যদি উদ্ধৃত রচনায় বানানের ভুল বা মুদ্রণের ত্রুটি থাকে, ভুলই উদ্ধৃত করে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে শুদ্ধ বানানটির উল্লেখ করতে হবে।

** পুরাতন অভিযোজিত বা সংক্ষেপ রুপ বানানকে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তিত করা যাবে ।


যতিচিহ্ন

** কমা বা পাদচ্ছেদ (,) → বাক্যে সুস্পষ্ট অর্থ বোঝানোর জন্য যেখানে সল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়।

** কমা বা পাদচ্ছেদ (,) → পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ব্যতিত সবগুলোর পরই কমা বসবে।

** কমা বা পাদচ্ছেদ (,) → সম্বোধনের পর কমা ব্যবহার করতে হবে ।

** কমা বা পাদচ্ছেদ (,) → প্রত্যেক খন্ডবাক্যের পর কমা বসবে ।

** কমা বা পাদচ্ছেদ (,) → উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে কমা বসবে।

** কমা বা পাদচ্ছেদ (,) → মাসের তারিখ, বার ও মাসের পর কমা বসবে ।

** কমা বা পাদচ্ছেদ (,) → বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পর কমা বসে।

** কমা বা পাদচ্ছেদ (,) → নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযুক্ত হলে সেগুলোর প্রত্যেকের পরে কমা বসবে ।

** সেমিকোলন (;) → কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে, সেমিকোলন বসে।

** দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)→ বাক্যের সমাপ্তি বোঝাতে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়।

** প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) → বাক্যে জিজ্ঞাসা করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হবে ।

** বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!) → হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে ব্যবহার করতে হবে । ।

** বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!) → সম্বোধন পদের পর বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহৃত হতো; কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বোধন স্থলে কমা বসে।

** কোলন (:) → একটি অপূর্ণ বাক্যের পর অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করার জন্য কোলন ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে উদাহারণ বোঝাতেও কোলন ব্যবহৃত হয় ।

** ড্যাস (—) → যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাস বসে।

** কোলন ড্যাস (:-) → উদাহারণ বোঝাতে আগে কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হত। বর্তমানে উদাহারণ বোঝাতে শুধু কোলন বহুল ব্যবহৃত।

** হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-) → সমাসবদ্ধ পদগুলোকে আলাদা করে দেখানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

** ইলেক বা লোপচিহ্ন (') →বিলুপ্ত বর্ণের পরিবর্তে লোপ চিহ্ন বসে।

** একক উদ্ধৃতি চিহ্ন (' ') → বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের অর্ন্তভুক্ত করতে হয়।

** যুগল উদ্ধৃতি চিহ্ন (" ") → যদি উদ্ধৃতির ভেতরে আরেকটি উদ্ধৃতি থাকে তখন প্রথমটির ক্ষেত্রে দুই উদ্ধৃতি চিহ্ন এবং ভেতরের উদ্ধৃতির জন্য এক উদ্ধৃতি চিহ্ন হবে।

Comments
* The email will not be published on the website.
I BUILT MY SITE FOR FREE USING